কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। কিডনি আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। যদি কোন কারনে কিডনির সমস্যা হয় তাহলে শরীরের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা যায়। কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত? এ সম্পর্কে জেনে সেই খাবারগুলো খেলে আমাদের কিডনির সমস্যা দূর হবে। কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত? তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত? তা জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্রঃ কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
- কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
- কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না
- কিডনি রোগী কি কি সবজি খেতে পারবে
- কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে
- কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে
- কিডনি রোগী কি কি মাছ খেতে পারবে
- আমাদের শেষ কথা
কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত - কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা pdf
আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি। যদি কিডনির কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে শরীরের বিভিন্ন রকমের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমাদের আগে থেকেই কিডনির সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই আমাদের সকলের কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত? এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে। কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা pdf সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ ব্লাড ক্যান্সার হলে কি হয় - ১০ টি ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়
কারণ আমাদের কিডনি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিডনি সমস্যা হলে আগে থেকেই কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না হঠাৎ করে এই সমস্যা ধরা পড়ে যাই। যখন সমস্যা অনেক বড় হয়ে যায় তখন বোঝা যায়। সে যেন আমাদের কিডনি সুস্থ রাখা খুবই জরুরী। কিডনিকে সুস্থ রাখতে আমাদের অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ। তাই আমাদেরকে কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা pdf সম্পর্কে জানতে হবে।
যে সকল খাবার কিডনির জন্য উপকারী যে খাবারগুলো খেলে কিডনির সমস্যাগুলো দূর হয় সাধারণত সেই গুলো খেতে হবে। কিডনি ভালো রাখার জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে আবার কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে। কিডনির সমস্যা হলে প্যাকেটজাত খাবার থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।
কারণ কিডনি রোগীদের জন্য সোডিয়াম আর ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাবারের লবণের পরিমাণ অনেক কমাতে হবে। দুগ্ধ জাত খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে মাছ খাওয়া যাবে না। ডাল দুধ পনির ও রাখা যাবে না রাতের খাবার। কিডনি রোগীর যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে তার ডায়েট আরো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কিডনি রোগীকে বেশি পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। কিডনি রোগীদের জন্য অন্য রোগীদের তুলনায় একটু বেশি ক্যালোরি নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ওজনের জন্য এই পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ ক্যালোরি হয়ে থাকে। শরীরের প্রোটিন যেন শক্তির অভাবে না ভাঙ্গে এজন্য ক্যালোরির বেশিরভাগই কার্বোহাইড্রেট থেকে বরাদ্দ করা হয়।
ডায়াবেটিক কিডনি রোগীর ক্যালরি অবশ্য তার ডায়াবেটিসের অবস্থা অনুযায়ী বিবেচনা করে করা হয়। এক্ষেত্রে ভাত, রুটি চিড়াসাগুচালের সুজি, নুডলস, খই ইত্যাদি কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ কিডনি রোগীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিয়েটিনের মাত্রা, ইউরিন মাইক্রো অ্যালবুমিনের মাত্রা, ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের মাত্রা, রোগীর ওজন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে প্রোটিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন রোগীভেদে ডায়েটে দেয়া হয়ে থাকে। প্রাণীজ প্রোটিন থেকে রোগীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। ডিমের সাদা অংশ, মুরগির বুকের মাংস, মাছ, দুধ বা দই থেকে নিদিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। অনেক রোগীদেরই একটি ভুল ধারণা থাকে যে, ৩০ গ্রাম প্রোটিন মানে ৩০ গ্রাম মাছ বা মাংস, যা সম্পূর্ণ ভূল।
৩০ গ্রাম প্রোটিন হলো ২৪ ঘণ্টায় রোগীর প্রোটিনের পরিমাণ। কিডনি রোগীর সোডিয়ামও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা, ইডিমা এবং গ্রহণ করা ওষুধের ভিত্তিতে সাধারণত প্রতিদিন ২ থেকে ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। ১ চামচ সমান ৫ গ্রাম। এক্ষেত্রে আলাদা লবণ অবশ্যই পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না
বর্তমানে কিডনি রোগের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে তারা কিডনির সমস্যার বেশি বুকে থাকে। আমাদের খাবারের ওপর অনেকটাই কিডনির সমস্যা এবং ভালো থাকা নির্ভর করে। কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না এই সম্পর্কেও ও আমাদেরকে জানতে হবে। কারণ যে খাবারগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকার সেগুলো থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না সেগুলো জানানো হবে।
১। যদি কিডনির সমস্যা দেখা যায় তাহলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শাকসবজি পিচ্ছিল ও গারো লাল রঙের শাকসবজি খাওয়া যাবেনা। কিডনি রোগের জন্য যে শাকসবজি গুলো উপকারি সেগুলো পরিমাণ মতো খেতে হবে।
২। অনেকেই কিডনির সমস্যা হলে ফল খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এক্ষেত্রে রোগের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বিবেচনা করে ফল নির্ধারণ করতে হবে। রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং বিভিন্ন রকমের বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে ফল নির্ধারণ করতে হবে।
৩। যত রকমের সাইট্রাস যুক্ত টক ফল রয়েছে যেমন লেবু কমলা মালটা আমলকি আম, আঙ্গুর এবং উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফল কলা এবং ড্রাই ফ্রুটস এগুলো অবশ্যই খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। যদিও খাওয়া যেতে পারে তবে খুবই কম পরিমাণ খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ টিউমার ভালো করার ৯ টি উপায়
৪। দুধ বা দুধ জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে খুবই অল্প পরিমাণে খেতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে কখনোই খাওয়া যাবেনা। বিশেষ করে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনির দুর্বল কার্যকারীদের জন্য বাড়তি ক্যালসিয়ামের কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
৫। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর। মাংসতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। যদি পরিমাণ মতো খাওয়া যায় তাহলে এটি কিডনিকে সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত খেলে অর্থাৎ উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
কিডনি রোগী কি কি সবজি খেতে পারবে
কিডনি রোগী কি কি সবজি খেতে পারবে? এ সম্পর্কে জেনে অবশ্যই একজন কিডনি রোগীকে খেতে হবে। যেহেতু কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যদি কিডনির সমস্যা হয় তাহলে আমাদের শারীরিক রকমের সমস্যা দেখা দিবে। তাই আমাদেরকে কিডনি রোগী কি কি সবজি খেতে পারবে? তা জানতে হবে।
একজন কিডনি রোগী যেসব সবজি খেতে পারবে তা হলঃ চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, চাল কুমড়া, পটল, ডাটা, লাউ এবং শশা খেতে হবে। কিডনি রোগের রক্তে পটাশিয়াম ফসফরাস ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি মাত্রা জেনে তারপর খাদ্য তালিকায় শাকসবজি যুক্ত করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়াম খাবার গুলো কিডনি রোগের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
কিডনি রোগী যে সকল শাক খেতে পারবে তা হলোঃ ডাটা শাক, লাউ শাক, লাল শাক এবং কমলি শাক। অর্থাৎ একজন কিডনি রোগী তার কিডনিকে সুস্থ করার জন্য এবং কিডনিকে ভালো রাখার জন্য উপরোক্ত শাকসবজি গুলো খেতে পারবে।
একজন কিডনি রোগীর যে সকল সবজি খাওয়া যাবেনা সেগুলো হলঃ সজনে, ঢেঁড়স, মিষ্টি আলু, ধনেপাতা, পালং শাক, বরবটি, কচু এবং পুঁইশাক। যদি কিডনি রোগ হয় তাহলে এই সবজিগুলো খাওয়া যাবে না।
কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের কিডনির সমস্যা হলে ফল খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট ফল রয়েছে যেগুলো কি জন্য অনেক উপকারী। অর্থাৎ পরিমাণ মতো এই ফলগুলো খেলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার করে থাকে। তাই আমাদেরকে কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে? তা জানতে হবে। কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে তা উল্লেখ করা হবে।
কিডনি রোগ হলে রোগের যে সকল ফল খাওয়া যাবে তা হলোঃ পেয়ারা, আপেল, পাকা পেঁপে, আনারস, কমলা, নাশপাতি ইত্যাদি। প্রতিদিন যেকোনো এক প্রকারের ফল খেতে হবে তাও আবার পরিমানমতো।
উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফল কম খেতে হবে। যে সকল ফলের মধ্যে উচ্চ পটাশিয়াম রয়েছে অর্থাৎ কলা, আঙ্গুর, আনার, লেবু, বড়ই, আমরা, কাঁঠাল এবং পাকা আম কম খেতে হবে। কারণ এই সকল ফলের মধ্যে উচ্চ পটাশিয়াম রয়েছে।
কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে
অনেকেই কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে কিনা? এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। ঘরে সকলেই জানি যে খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী ফল। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে। তবে কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে কিনা? সে সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানতে হবে।
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং কিডনি রোগের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া জলপাই, মিষ্টি আলু, টমেটো, কিসমিস, কমলা এবং খেজুর এর মধ্যে উচ্চ পটাশিয়াম রয়েছে। একজন কিডনি রোগীর অবশ্যই এ সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই কিডনি রোগের খেজুর খাওয়া যাবেনা।
কিডনি রোগী কি কি মাছ খেতে পারবে
কিডনি রোগী কি কি মাছ খেতে পারবে তা জানতে হবে। কারণ যেহেতু আমরা বাঙালি মাছ খেতে পছন্দ করি। আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত যে খাবারটি দেখা যায় তা হল মাছ। তাই কারো কিডনির সমস্যা হলে কিডনি রোগী কি কি মাছ খেতে পারবে? তা ভালোভাবে জানতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সকালে ব্যায়াম করার ১০টি উপকারিতা - সকালে ব্যায়াম করার দশটি নিয়ম
প্রাণীজ আমিষ যেমন মাছ মাংস দুধ ডিম ইত্যাদি পরিমাপমতো খেতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে এগুলো খাওয়া যাবে না। যারা কিডনি ট্রান্সপারেন্ট রোগী রয়েছে সাধারণত তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এর সাথে মুরগির চামড়া ছাড়া মাংস, মাছ দুধ খেতে হবে। এবং যারা ডায়ালাইসিস এর রোগী রয়েছে সাধারণত তাদের মাছ-মাংস এবং ডিম বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
আমাদের শেষ কথাঃ কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে কিডনি রোগী কি কি মাছ খেতে পারবে? কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে? কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে? কিডনি রোগী কি কি সবজি খেতে পারবে? কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত না? কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা pdf, কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কিডনির সমস্যা থাকলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে বিষয়টি পড়ে নিন। ২০৭৯১
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url